জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : দুরন্তপনা ও চিরসবুজে বেড়ে ওঠা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষেরই বাল্য কালের স্মৃতি। কিন্তু বর্তমান কালে আধুনিকতার বেড়াজালে দুরন্ত শৈশব আর চিরসবুজে বেড়ে ওঠার সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। আধুনিক সভ্যতার প্রভাবে সবুজ প্রকৃতির পরিবর্তে এখন তারা বেড়ে ওঠছে ইঠ পাথর দিয়ে গড়া কংক্রিটের সমাজে। শহর-গ্রাম সবখানেই এখন একই অবস্থা। গ্রামের সংজ্ঞার সাথে বর্তমানকার গ্রামের পার্থক্য দৃশ্যমান। গ্রাম নামক এই উপশহরগুলোতে এখন বসন্তে কোকিল ডাকে না, শীতকালে খেজুর রস আর পাওয়া যায় না কিংবা হেমন্তে পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধেও এখন আর প্রকৃতি মুখর হয় না। নবান্ন ও পিঠাপুলি উৎসবের মতো সংস্কৃতিও এখন জাদুঘরে স্থান নিয়েছে। আধুনিকতার এই প্রভাবে শিশুরাই এখন শৈশব হারা। আগেকার যেকোন মানুষকে যদি শৈশবের সংজ্ঞা বলতে বলা হয়, উত্তরে সে অবশ্যই বলবে, শৈশব হল সেই ধরনের এক জীবন, যেখানে রয়েছে দুরুন্ত শিশুজীবনে সবুজ প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠার স্মৃতি। হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, ফুটবল, ক্রিকেট, সাতার কেটে দিন পার করে দেওয়ার আনন্দ। কিন্তু এখনকার কোন শিশুকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার ২৪ ঘন্টা কিভাবে কাটে? তবে অধিকাংশ শিশুরাই জবাব দেবে, সকালে ঘুম থেকে ওঠে বিদ্যালয়ে যাই, সারাদিন ক্লাশ শেষে বিকালে ফিরে আবার প্রাইভেট পড়তে বসি। সেখান থেকে ফিরে নিজের পাঠ প্রস্তুত করি। এরপর যদি সময় পায় তাহলে ভিডিও গেম খেলি কিংবা স্মার্টফোনের সাহায্যে সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটায়। বর্তমানে ছোট-বড় সব গ্রাম কিংবা শহরের এই চিত্র বিশ্বের যেকোন দেশের শিশুরদেরই। ডিজিটালাইজড এর নামে যন্ত্র নির্ভরতা আমাদের মস্তিষ্ককে গ্রাস করেছে। কোকিল পাখির সুরের পরিবর্তে এখন শিশুদের ঘুম ভাঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইসের সুরে। সত্যিকারের শৈশব এখন কৃত্রিমতার বেড়াজালে নষ্ট হতে বসেছে। এখন আর কোন শিশু দলের কন্ঠে শোনা যায় না : কী করি আজ ভেবে না পায়, পথ হারিয়ে কোন পথে যায়…
তাই বর্তমানে আমাদের শিশুরাই শৈশব হারা। পাখির কলকাকলি আর প্রকৃতির সোন্দর্য দেখার সুযোগ কিংবা সময় কোনটাই এখন তাদের নেই। বাসায় থাকলে মা-বাবার বকুনি, বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বকুনি এসবে শিশুর জীবন অতিষ্ট। যোগাযোগের ব্যাপক প্রসারে বাল্যকালেই এখন তারা স্বীকার হচ্ছে সেক্সুয়াল হয়রানীর মতো নানা ভোগান্তির। তাই এখনই নজর দেওয়া জরুরি আমাদের শিশুদের প্রতি। কবিগুরুর কন্ঠে সুর মিলিয়ে এখন বলার সময় এসেছে : দাও ফিরিয়ে এই অরণ্য, লওহে এনগর….